নাট্যকার শূদ্রকের “মৃচ্ছকটিকম্” নাটকের বিষয়বস্তু আলোচনা করে নাট্যশৈলী ও কবির নাট্য প্রতিভা আলোচনা কর।
“মুদ্রারাক্ষসম্” নাটকের বিষয়বস্তু আলোচনা করে নাট্য বৈশিষ্ট্য ও কবি প্রতিভা আলোচনা কর।
And
(toc) #title=( সূচিপত্র)
সংস্কৃত শিক্ষক কর্তৃক কুড়ি বছরের শিক্ষকতা করার
অভিজ্ঞতা প্রসূত এই নোটস গুলি সংস্কৃত বিষয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ১০০% নম্বর পাওয়ার
যোগ্য করে রচিত। Class 12 এর বহু ছাত্র-ছাত্রী এই নোটস্ লিখে পরীক্ষায় ৯০%
থেকে ১০০% নম্বর পেয়েছে।
পাঠ্য সম্পর্কিত তথ্যঃ
| পাঠ্যের নাম | সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস |
| উৎস | গুনাঢ্যের “বৃহৎকথা” এবং বিষ্ণুপুরাণ, ইতিহাস ও লোককাহিনী |
| মূল গ্রন্থ | মৃচ্ছকটিকম্ ও মুদ্রারাক্ষসম্ |
| গ্রন্থের শ্রেণী | শৃঙ্গার রসাত্মক প্রকরণ জাতীয় দৃশ্যকাব্য ও বীর রসাত্মক নাটক জাতীয় দৃশ্যকাব্য |
| রচয়িতা | নাট্যকার শূদ্রক ও বিশাখ দত্ত |
নোটস্ গুলির বৈশিষ্ট্যঃ
| ক্রমিক সংখ্যা | নোটস্ গুলির বৈশিষ্ট্য |
|---|---|
| ১। | সহজ সরল ভাষায় লেখা। |
| ২। | নোটসের মধ্যে অযথা পাণ্ডিত্য প্রকাশ করা হয়নি। |
| ৩। | ভাষা ও শব্দের পরিমিত প্রয়োগ করা হয়েছে। |
| ৪। | যেখানে প্রয়োজন কেবলমাত্র সেখানেই যথাযথ উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। |
| ৫। | উত্তর গুলির আকার অযথা বড় বা ছোট করা হয়নি। |
| ৬। | উত্তর গুলি পরীক্ষকদের রুচিসম্মত ভাবে ছোট ছোট পয়েন্ট করে লেখা হয়েছে। |
| ৭। | পরীক্ষায় যথাযথ ভাবে উত্তর গুলি লিখলে ৯০% থেকে ১০০% নম্বর অবশ্যই পাবে। |
প্রশ্নঃ- ৯
নাট্যকার শূদ্রকের “মৃচ্ছকটিকম্” নাটকের বিষয়বস্তু আলোচনা করে নাট্যশৈলী ও কবির নাট্য প্রতিভা আলোচনা কর।
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
নাট্যকার শূদ্রক রচিত মৃচ্ছকটিকাম্ শুধু সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যেই নয় সমগ্র
সাহিত্যেরই এক বিশেষ সৃষ্টি। সমাজের অত্যন্ত সাধারণ মানুষকে অবলম্বন করে রচিত এই
রূপ সাহিত্য সংস্কৃত সাহিত্যে দুর্লভ। দশ অঙ্কে রচিত এই প্রকরণ জাতীয় দৃশ্য
কাব্যের রচয়িতা অস্মক দেশীয় ব্রাহ্মণ রাজা শূদ্রক। সম্ভবত গুনাঢ্যের “বৃহৎকথা” অবলম্বনে নাটকটি রচিত । এই নাটকে সমাজের চোর, জুয়ারী, ধূর্ত, গনিকা
প্রভৃতি নিম্ন শ্রেণীর মানুষের অবস্থার কথা বর্ণিত হওয়ায় নাটকটি আজও অনন্য।
বিষয়বস্তুঃ
উজ্জয়নির বার - বনিতা বসন্ত সেনা চারুদত্তের প্রেমাকৃষ্ট ছিল। আবার
দুশ্চরিত্র রাজ-শ্যালক শকার বসন্তসেনার প্রণয় প্রার্থী ছিল। বসন্তসেনা শকারকে
পছন্দ করত না। তাই সে ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে বসন্ত সেনার গলা টিপে ধরে। বসন্তসেনা
মূর্ছিত হয়ে পড়ে। শকার তাকে মৃত ভেবে চারুদত্তের প্রতি হিংসা চরিতার্থ করার জন্য
মিথ্যা বলে বসন্তসেনাকে হত্যা করার অভিযোগ রাজার কাছে জানায়। রাজা চারুদত্তকে
অন্যায় ভাবে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। এদিকে বসন্ত সেনার জ্ঞান ফিরলে সে
চারুদত্তকে বাঁচানোর জন্য বধ্যভূমিতে প্রবেশ করে। আবার ঠিক সেই সময় আর্যক
উজ্জয়িনী অধিকার করে অত্যাচারী রাজা পালককে সিংহাসন চ্যূত করেন। আর্যকের
উপকারী বন্ধু চারুদত্ত প্রাণ ফিরে পায়
এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসন্তসেনাকে বধূর মর্যাদা দিয়ে স্বগৃহে ফিরে আসে।
নাট্য-বৈশিষ্ট্যঃ
শূদ্রক রচিত “মৃচ্ছকটিকম্” নাটকের
নাট্য বৈশিষ্ট্য হলো-
প্রথমতঃ
হীনকুলজাত ও হীন বৃত্তি সম্পন্ন নাগরিক ও সজ্জন ব্যক্তিদের গণঅভ্যুত্থান এই
নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
দ্বিতীয়তঃ
নাটকের চরিত্রগুলি সমুজ্জ্বল। যেমন - নায়ক চারুদত্ত সজ্জন প্রেমিক বধূ ও
পুত্র বৎসল; বসন্ত
সেনা গনিকা হলেও চারিত্রিক দৃঢ়তা সততা ও মহত্ত্বপূর্ণ হৃদয় সকলকে মুগ্ধ করে।
তৃতীয়তঃ
এই নাটকের নামকরণ বাস্তব সম্মত, অত্যালৌকিকতা হীনতা; বৃহৎ সামাজিক ও রাষ্ট্রিক পরিসর; ঘটনার দ্রুতগতি ও চরিত্র চিত্রণ প্রভৃতি প্রাচ্য ও
পাশ্চাত্য জগতের সর্বত্র সমাদৃত।
চতুর্থতঃ
শূদ্রকের রচনাশৈলী খুবই সরল। দীর্ঘ ছন্দের প্রয়োগ হীনতা, শৃঙ্গার রসের আধিক্য প্রভৃতি এর অপর এক বৈশিষ্ট্য।
পঞ্চমতঃ
এই নাটকে প্রমোদ কাননের বর্ণনা, বর্ষার বর্ণনা, বিষাদ প্রভৃতির সুন্দর বর্ণনা নাটকটি কে অন্য মাত্রা দান
করেছে।
নাট্যকার হিসেবে শূদ্রকের কৃতিত্বঃ
নাট্যকার শূদ্রক তার নাট্য প্রতিভার আলোকে এই নাটকের মধ্যে যে সকল স্বকীয়
প্রতিভায় সৃষ্টি নৈপুণ্যের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা হল-
প্রথমতঃ
সামাজিক প্রেম মূলক বাস্তবধর্মী এই নাটকে তথাকথিত প্রাকৃতিক ও তুচ্ছ চরিত্র
গুলির মধ্যে মনুষত্বের আবিষ্কার নাট্যকারের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব।
দ্বিতীয়তঃ
নাটকের ভাষা, নাট্যশৈলী, ঘটনার বিন্যাস প্রভৃতি কবির স্বকীয় প্রতিভার স্বাক্ষর বহন
করে।
তৃতীয়তঃ
এই নাটকের সংলাপ সর্বত্র চরিত্রাণুগ, গতিশীল ও সংক্ষিপ্ত করে নাট্যকার নানা উপকাহিনীর দ্বারা মূল
কাহিনী কে সমৃদ্ধ করেছেন।
চতুর্থতঃ
শৃঙ্গার রস প্রধান নাটকটিতে কবি করুণ রস ও হাস্য রস সৃষ্টি করে মুন্সিয়ানার
পরিচয় দিয়েছেন।
উপসংহারঃ
সর্বোপরি বলা যায় যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাটক গুলির মধ্যে অন্যতম একটি নাটক হলো “মৃচ্ছকটিকাম্”। সমাজের
বিভিন্ন ধরনের মানুষ, ভাষা ও তাদের চরিত্র কে কবি যেমন নাটকটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন তেমনি হাস্যকৌতুক, শ্লেষ, সামাজিক ব্যঙ্গ বিদ্রূপ, স্বার্থের সংঘাত প্রভৃতি সামাজিক ও মানবিক জীবনের প্রতিচ্ছবিও নাট্যকার
নাটকটিতে সুন্দরভাবে পরিস্ফুটিত গড়ে তুলেছেন।
প্রশ্নঃ- ১০
“মুদ্রারাক্ষসম্” নাটকের বিষয়বস্তু আলোচনা করে নাট্য বৈশিষ্ট্য ও কবি প্রতিভা আলোচনা কর।
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ
সংস্কৃত নাট্য সাহিত্যের অন্যতম নাট্যকার বিশাখ দত্ত রচিত “মুদ্রারাক্ষসম্” নাটকটি নারী চরিত্র বর্জিত ঐতিহাসিক নাটক। রাজবংশে জাত
রাজনীতিজ্ঞ নাট্যকার বিশাখ দত্ত ন্যায়শাস্ত্র ও জ্যোতির্দর্শনে অগাধ পণ্ডিত
ছিলেন। তাঁর এই পাণ্ডিত্যের দ্বারা এবং অসাধারণ কবিত্ব শক্তির দ্বারা “মুদ্রারাক্ষসম্” নামক নতুন প্রকৃতির এই রাজনীতি ও কূটনীতি বিষয়ক নাটক রচনা
করে পাঠক তথা রসিকদের হৃদয়ের সর্বোচ্চ আসন অধিকার করেছেন।
বিষয়বস্তঃ
বিষ্ণুপুরাণ, ইতিহাস
ও লোককাহিনীকে অবলম্বন করে রচিত সাত অঙ্কের এই নাটকের নায়ক তথা প্রধানমন্ত্রী
হলেন চাণক্য। নন্দরাজের প্রভুভক্ত মন্ত্রী রাক্ষস কে তিনি নিজের কূটনৈতিক বুদ্ধির
দ্বারা চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রী পদ গ্রহণ করিয়ে চন্দ্রগুপ্তকেই যেভাবে সিংহাসনে
অধিষ্ঠিত করিয়েছেন, তা-ই এর
বিষয়বস্তু। এর প্রত্যেকটি অংকে যা বর্ণিত হয়েছে তা হলো -
প্রথমাঙ্কঃ
প্রথমেই রাক্ষসের তিন বন্ধু জিসিদ্ধি, শকট দাস এবং চন্দন দাস কে কুসুমপুরের অধিবাসী হিসেবে চাণক্য
জানতে পারেন এবং মুদ্রাসহ তাদের সন্ধান পান।
দ্বিতীয়াঙ্কঃ
এই অংকে বহু চেষ্টা করেও রাক্ষস কুসুমপুরে চন্দ্রগুপ্তকে আঘাত করতে ব্যর্থ হন।
তৃতীয়াঙ্কঃ
এই অংকে কৌমুদি মহোৎসব ব্যর্থ হয়।
চতুর্থাঙ্কঃ
এই অংকে রাক্ষসের সমস্ত কৌশল ব্যর্থ হয়।
পঞ্চমাঙ্কঃ
এই অংকে রাক্ষসের সাথে বিরোধে মলয়কেতু ও তার সহযোগীরা ধরা পড়ে।
ষষ্ঠাঙ্কঃ
এই অঙ্কে রাক্ষস কুসুমপুরে এসে বন্ধু চন্দন দাসের মৃত্যুদণ্ডাদেশ সম্পর্কে
জানতে পারেন।
সপ্তমাঙ্কঃ
এই অঙ্কে রাক্ষস তার বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য চাণক্যের বন্ধুত্ব তথা
চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রিত্ব স্বীকার করেন।
নাট্য-বৈশিষ্ট্যঃ
সংস্কৃত সাহিত্যে বীর রস প্রধান স্ত্রী ভূমিকা বর্জিত একমাত্র ঐতিহাসিক নাটক
হল মুদ্রারাক্ষস। এর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল-
প্রথমতঃ
এই নাটকটি ঐতিহাসিক পটভূমিকায় রচিত হওয়ায় রাজা চন্দ্রগুপ্তের
বিচক্ষণমন্ত্রী চাণক্যের কূটনীতি ও রাজনীতি এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
দ্বিতীয়তঃ
নারী ভূমিকা বর্জিত এই নাটকে প্রণয়ের কোন স্থান নেই।
তৃতীয়তঃ
এই নাটকে বিদূষকের চরিত্র না থাকায় রচনাশৈলী সংহত তথা প্রাঞ্জল হয়েছে।
ওজস্বী ভাষার প্রয়োগে নাটকটি পাঠক সমাজে বিশেষভাবে প্রশংসার দাবি রাখে।
চতুর্থতঃ
চাণক্য ও রাক্ষস এই দুই ধুরন্ধর, দক্ষ, বিচক্ষণ রাজনীতিজ্ঞের কূটনৈতিক কৌশল নাটকটিকে অদ্বিতীয় করে তুলেছে।
বিশাখ দত্তের নাট্য-প্রতিভাঃ
মুদ্রারাক্ষস নাটকের কবি বিশাখ দত্ত তাঁর কবিত্ব শক্তির সমস্ত দিক এই নাটকে
উদ্ভাসিত করে তুলেছেন। তাই কবি প্রতিভার যে সকল দিকগুলি এই নাটকে ফুটে উঠেছে
সেগুলি হল -
প্রথমতঃ
কবি নাটকের ভাষাকে সহজ সরল করে ওজোময় ভঙ্গিতে নাটকটিকে বাস্তবধর্মী করে
তুলেছেন।
দ্বিতীয়তঃ
কবি চাণক্যের কূটনীতি ও রাক্ষসের চরম জ্ঞান ও ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটিয়ে
নিজের চাণক্য নীতি ও শুভ্রনীতির অগাধ জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন।
তৃতীয়তঃ
নাটকে উপমা, রূপক, শ্লেষ প্রভৃতি অলংকার; প্রসাদ, ওজো,
মাধুর্য প্রভৃতি গুণ; শার্দুলবিক্রীড়িত, আর্যা, বসন্ততিলক প্রকৃতির ছন্দের প্রয়োগ করে বীর রসপ্রধান এই নাটকে কবি করুণ রস
ফুটিয়ে তুলেছেন।
চতুর্থতঃ
সমাজের কৌলিন্য, অস্পৃশ্যতা, কুসংস্কার প্রভৃতি ফুটিয়ে তুলে তৎকালীন সমাজের এক স্বচ্ছ
চিত্র কবি আমাদের উপহার দিয়েছেন।
উপসংহারঃ
সর্বোপরি বলা যায় যে, ভাব ও
ভাষার সমন্বয়, রচনাশৈলী, সংলাপ, কাহিনী বিন্যাস, চরিত্র
চিত্রন,
ছন্দ, অলংকার, রস ও
গুণের যথাযথ প্রয়োগ করে তথা প্রকৃতির সার্থক সমীক্ষণের মাধ্যমে নাট্যকার বিশাখ
দত্ত মুদ্রারাক্ষস নাটকটিকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটকে পরিণত করেছেন।

No comments:
Post a Comment